Prime Minister's Office
৭২তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাকার থেকে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On :15, August 2018 10:51 IST
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ৭২তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লালকেল্লার প্রাকার থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন।
আত্মবিশ্বাসে ভরপুর বর্তমান ভারতের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ছয় জন যুবা মহিলা নৌ-সেনা আধিকারিকের সফলভাবে সমুদ্রপথে বিশ্ব পরিক্রমা এবং অতি সাধারণ জায়গা থেকে উঠে আসা তরুণ ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেন। নীলগিরি পর্বতমালায় প্রস্ফুটিত ‘নীলাকুরুঞ্জি’ ফুলের কথা উল্লেখ করে তিনি এর বিশেষত্ব ব্যাখ্যা করে জানান, ঘটনাচক্রে প্রতি ১২ বছরে একবার এই ফুল ফোটে। সংসদের সদ্যসমাপ্ত অধিবেশনকে সামাজিক ন্যায়-বিচারের স্বার্থে উৎসর্গ করা হয়েছিল বলেও তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ভারত এখন বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীগুলির জওয়ান ও পুলিশ কর্মীদের সেলাম জানান। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডে শহীদদের কথাও তিনি বিশেষভাবে স্মরণ করেন। ১৯১৯-এর বৈশাখী দিবসে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। দেশের বিভিন্ন অংশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য তিনি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
বিশিষ্ট কবি সুব্রামনিয়াম ভারতীকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সমগ্র বিশ্বকে সব ধরণের বাধা-বিপত্তি থেকে মুক্তির পথ দেখাবে। অগণিত স্বাধীনতা সংগ্রামী এই স্বপ্ন দেখেছিলেন। এমনকি, একটি জাতির এই স্বপ্ন পূরণে বাবাসাহেব আম্বেদকর এক সুসংবদ্ধ সংবিধান রচনা করেছিলেন, যেখানে গরিব মানুষের জন্য ন্যায়-বিচার এবং সার্বিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে সকলের সমান সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র গঠনে ভারতীয়রা একজোট হয়ে এগিয়ে আসছেন। শৌচাগার নির্মাণ, গ্রামীণ বৈদ্যুতিকীকরণ সহ রান্নার গ্যাসের সংযোগ, গৃহনির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের গতির কথাও তিনি দৃষ্টান্ত-স্বরূপ উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের স্বার্থে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি, অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) এবং এক পদ – এক পেনশন চালু সহ এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে পড়ে ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার ফলেই এগুলি সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলি ২০১৩-র তুলনায় কেন আজ ভারতকে পৃথক দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখছে, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নীতি পঙ্গুত্বে’র সময় পার করে ভারত ‘সংস্কার, কার্যসম্পাদন ও রূপান্তরের’ দিশায় অগ্রসর হয়েছে। ভারত এখন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বহুপাক্ষিক সংগঠনের সদস্য এবং আন্তর্জাতিক সৌর জোটকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল বর্তমানে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সাফল্য, সংযোগ বিহীন শেষতম গ্রামটিতে বিদ্যুতায়ন এবং জৈব চাষাবাদের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠার জন্য সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে।
মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ১৩ কোটি ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই ঋণ সহায়তার মধ্যে ৪ কোটি এমন সুফলভোগী মানুষ রয়েছেন, যাঁরা প্রথমবার ঋণ সহায়তা পেলেন।
ভারত তার বিজ্ঞানীদের সাফল্যে গর্বিত বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দেশীয় দক্ষতা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ২০২২ নাগাদ মানব বাহিত মহাকাশ যান ‘গগণ-যান’ অন্তরিক্ষে প্রেরণের পরিকল্পনা চলছে। ভারতের এই প্রচেষ্টা সফল হলে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হয়ে উঠবে বলেও তিনি জানান।
২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের উপার্জন দ্বিগুণ করার কথা পুনরায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই লক্ষ্য পূরণ অত্যন্ত কঠিন বলে প্রতিপন্ন হলেও তা সম্পাদনের সর্বাতমক প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, উজ্জ্বলা যোজনা ও সৌভাগ্য যোজনার মতো উদ্যোগগুলি সাধারণ মানুষের মর্যাদা বাড়াচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর প্রশংসা করেছে।
পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মতিথি অর্থাৎ এ বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ‘প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য অভিযান’-এর সূচনার কথাও প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতের গরিব মানুষজনের কাছে গুণগত মানের ও সুলভ স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ৫০ কোটি ভারতবাসী বিশেষভাবে লাভবান হবে বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
প্রায় ৬ কোটি নকল উপভোক্তাকে বাদ দিয়ে কিভাবে সুনির্দিষ্ট উপভোক্তাদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান অর্জন করা সম্ভব হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সেকথাও বিশদে ব্যাখ্যা করেন। দেশের সার্বিক বিকাশে সৎ করদাতাদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেবল এই সৎ করদাতাদের জন্যই অসংখ্য মানুষের অন্নের সংস্থান হয় এবং গরিব মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসে।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, দুর্নীতি ও কালো টাকাধারীদের কোনওভাবেই ক্ষমা করা হবে না। তিনি জানান, দিল্লির সড়কগুলি এখন দালালদের প্রভাব থেকে মুক্ত। গরিব মানুষের কল্যাণে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, এখন থেকে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীগুলিতেও অস্থায়ীভাবে কর্মরত মহিলা আধিকারিকদের পারদর্শিতা প্রমাণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানোন্নয়ন করে স্থায়ীকরণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
তিন তালাক প্রথা মুসলিম মহিলাদের প্রতি ঘোরৎর অন্যায় বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, তাঁরা যাতে ন্যায়-বিচার পান সেজন্য তিনি কাজ করে যাবেন।
দেশে উগ্র-বামপন্থাবাদ হ্রাসের কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর ‘ইনসানিয়ত, জামহুরিয়ত এবং কাশ্মীরীয়ত’ পরিকল্পনার কথাও তিনি পুনরায় স্মরণ করেন।
তিনি সকলের জন্য গৃহ, সকলের জন্য বিদ্যুৎ, সকলের জন্য দূষণমুক্ত রান্নার জ্বালানি, সকলের জন্য জল, সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য বিধান, সকলের জন্য দক্ষতা, সকলের বিমা ব্যবস্থা ও সার্বিক যোগাযোগ গড়ে তোলার ওপর বিশেষ জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সার্বিক অগ্রগতি, অপুষ্টি দূরীকরণ ও ভারতবাসীর জীবনযাপনে মানোন্নয়ন দেখার জন্য তিনি অস্থির, ব্যাকুল ও উৎসুক হয়ের উঠবেন।
CG/BD/SB……