৭১তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাকার থেকে আজ প্রধানমন্ত্রী জাতিরউদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ।
ভারতের স্বাধীনতার জন্য যেসব মহান নারী ও পুরুষ কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন,প্রধানমন্ত্রী তাঁদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ভারতের মানুষ কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এবং গোরক্ষপুরের ঘটনায় মৃত শিশুদের পাশেরয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরটি এক বিশেষ বছর কারণ, এই বছরেই ভারত ছাড়োআন্দোলনের ৭৫তম বর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। এছাড়া, চম্পারণ সত্যাগ্রহের শতবর্ষ এবং বালগঙ্গাধর তিলকের অনুপ্রেরণায় ‘সার্বজনিক গণেশ উৎসব’-এর১২৫তম বর্ষ উদযাপিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭-এর মধ্যে জাতি তাঁদের সমবেত শক্তিপ্রদর্শন করেছে। এই সময়ে আন্দোলনের তরঙ্গ শীর্ষে ভারতের স্বাধীনতা এসেছে। তিনিবলেন, ২০২২ সালের মধ্যে নতুন ভারত গড়ে তোলার সঙ্কল্পে আমাদের একইরকম সমবেত শক্তিপ্রদর্শন করতে হবে। তিনি জোরের সঙ্গে বলেন যে আমাদের দেশে সবাই এক। সমবেতভাবে আমরাএক গুণগত পরিবর্তন আনতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী ‘চলতা হ্যায়’ – আত্মসন্তুষ্টির মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বানজানান এবং এর পরিবর্তে ‘বদল সাকতা হ্যায়’ বা সদর্থক পরিবর্তনের মানসিকতা গড়ে তোলারকথা বলেন।
শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ভারতের নিরাপত্তাই আমাদের অগ্রাধিকার এবংসার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মধ্য দিয়ে তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বেরমধ্যে ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহু দেশ ভারতকে সন্ত্রাসবাদের সমস্যামোকাবিলায় সহযোগিতা করছে। বিমুদ্রাকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে যারা জাতি এবং দরিদ্রমানুষকে লুঠ করেছে তারা আর শান্তি ঘুমোতে পারবে না। আজ ‘সততা’ উদযাপিত হচ্ছে। তিনিজোরের সঙ্গে বলেন, কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই চলবে এবং প্রযুক্তি সহায়তায় স্বচ্ছতাআনা সম্ভব হবে। তিনি সাধারণ মানুষকে আরও বেশি করে ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর রূপায়ণকে সহযোগিতামূলকযুক্তরাষ্ট্রীয়তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, দরিদ্রমানুষরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের উদ্যোগের মাধ্যমে মূলস্রোতে সংযুক্ত হচ্ছেন।তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, সুপ্রশাসন হচ্ছে দ্রুত এবং নীতি-পদ্ধতির সহজীকরণ।জম্মু-কাশ্মীর প্রধানমন্ত্রী জোরের সঙ্গে বলেন যে গালাগাল বা বুলেট দিয়ে নয়,আলিঙ্গনের মাধ্যমেই ঐ রাজ্যের সমস্যার সমাধান হতে পারে (না গালি সে, না গোলি সে,পরিবর্তন হোগা গলে লাগানে সে)।
নতুন ভারত বিষয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসাধারণ মানুষই প্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। তন্ত্র লোককে চালাবে না, বরংলোকই তন্ত্রকে পরিচালনা করবে।
চলতি বছরে রেকর্ড খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশের কৃষক ওকৃষি বিজ্ঞানীদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন সরকার এ বছরে ১৬ লক্ষ টন ডালশস্য সংগ্রহকরেছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির পরিবর্তনের ফলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেভিন্ন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশের যুবকদের কর্মপ্রার্থীরজায়গায় কর্মসংস্থানকারী হিসেবে সহায়তা করা হচ্ছে।
মহিলাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব মহিলা ‘তিন তালাক’-এরভোগান্তি সহ্য করেছেন এবং বর্তমানে এই প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদেরসাহস প্রশংসনীয়। তিনি আরও বলেন, যে সমগ্র জাতি তাঁদের এই লড়াইয়ে পাশে আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত শান্তি, একতা এবং সংহতির পক্ষে। তিনি বলেন,জাতিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা কোনভাবেই আমাদের সাহায্য করবে না। তিনি বিশ্বাসের নামেহিংসার তীব্র নিন্দা করেন এবং বলেন এই প্রবণতাকে ভারতে কোনভাবেই গ্রহণ করা হবে না।তিনি বলেন, তখন ‘ভারত ছাড়ো’ ডাক দেওয়া হয়েছিল, এখন সময় এসেছে ‘ভারত জোড়ো’র।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের পূর্ব এবং পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বিশেষমনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার উন্নয়নের নতুন এক পথে ভারতকে দ্রুতগতিতে এগিয়েনিয়ে যেতে চাইছে।
শাস্ত্র থেকে উদ্বৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে আমরা যদি সঠিক সময়ে সঠিকপদক্ষেপ না নিই তাহলে প্রত্যাশিত ফললাভ সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, টিম ইন্ডিয়াকে বাদলগতভাবে ভারতকে নতুন এক ভারত গড়ে তোলার সঙ্কল্প গ্রহণ করতে হবে।
তিনি এমন এক নতুন ভারতের কথা বলেন যেখানে দরিদ্রদের গৃহ থাকবে, তাঁদেরজন্য জল এবং আলোর ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে কৃষকেরা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন এবংতাঁদের আয় আজকের তুলনায় দ্বিগুণ হবে। তিনি সেই নতুন ভারতের কথা বলেন যেখানে যুবকএবং মহিলারা তাঁদের স্বপ্ন পূরণে সবরকম সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তিনি সন্ত্রাসবাদ,সাম্প্রদায়িকতা, জাতিবাদ, দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণ মুক্ত ভারতের কথা বলেন। তিনি একস্বচ্ছ এবং স্বাস্থ্যকর দেশের কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশের সাহসিকতার পুরস্কার ভূষিতদের সম্মানে একটিওয়েবসাইট-এর সূচনা করেন।
PG/PB/DM/