Special Service and Features
এক বৃহ ৎ অর্থনৈতিক শক্তিরূপে উঠে আসছে ভারত
Posted On :14, August 2017 13:32 IST
* রাজীব রঞ্জন রায়
গত ৭০ বছরে ভারতের অর্থনৈতিকঅগ্রগতি মনোমুগ্ধকর সাফল্যের এক অন্যতম কাহিনী। হরেক দুর্দশা- পরিকাঠামো প্রায়নেই, অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির জন্য দরকারী অধিকাংশ জিনিসের অভাব, এসব সঙ্গে নিয়েইঅর্থনৈতিক স্বাধীনতার লক্ষ্যে ভারতের অভিযান ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা। আমাদেরদৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেতারা হাল ছেড়ে দেন নি, একটি একটি করে গেঁথে একটু একটু করে দেশগড়েছেন। গরিবি ও চাষিদের দুঃখ দূর করার উপর জোর দিয়ে পাঁচসালা যোজনার ধ্যান-ধারনাছিল সঠিক দিশায় এক অসাধারণ সূচনা।
বছরেরপর বছর সিস্টেম বা ব্যবস্হা প্রণালীতে গেড়ে বসেছে হাজারো জটিলতা। সহজে ব্যবসাকরার বিষয়টি কখনই উৎসাজনক ছিল না। বিদেশী মুদ্রা সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা।প্রত্যক্ষ বিদেশী লগ্নি ছিল ছিটেফোঁটা। ফলে, রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকারসময়, অর্থনীতির আগল খুলে দেওয়ার দাবি জোরদার হতে শুরু করে। নরসিংহ রাও প্রধানমন্ত্রীনা হওয়া ইস্তক, রাজনৈতিক টালমাটাল দশার দরুন অবশ্য খুব একটা এ ব্যাপারে এগোন যায়নি। রাও রীতিনীতির কড়াকড়ি কমিয়ে বিদেশী লগ্নির জন্য দরজা হাট করে খুলে দেন। শুরুহয় অর্থনৈতিক উদারীকরণের যুগ। রাজনৈতিক অস্হিরতা ও কারগিল যুদ্ধের জন্য ১৯৯৬ থেকে১৯৯৯ অবধি বিদেশী ও অভ্যন্তরীণ লগ্নি অবশ্য ছিল সামান্যই।
কারগিলযুগ্ধের পর ভারতের অর্থনীতি ফের ঘুরে দাঁড়ায়, সৌজন্যে তখনকার প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর দূরদর্শী নেতৃত্ব। বস্তুত, উদার অর্থনীতির ‘ ফিল গুড ফ্যাকটর ’ বা সুখানুভূতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং রাস্তাঘাট ও বিদ্যু ৎ কারখানা সহ বড় পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে টাকা ঢালতে লগ্নি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্হারবিলগ্নিকরণ বা সরকারি শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার পালা হয় জোরদার। সেই ইস্তক, ভারত আরপিছু ফিরে তাকায় নি। এমনকি, ২০০৮-এ দুনিয়া জোড়া ডামাডোলের সময়েও ভারতীয় অর্থনীতিছিল চাঙ্গা এবং বিকাশ হার বৃ্দ্ধি বজায় রেখে বিশ্বের লগ্নিকারীদের জন্য এক উজ্জ্বলভরসাস্হল রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে, চিনকে টপকে ভারতবিশ্বের বড় অর্থনীতিগুলির মধ্যে বিকাশ হার বৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে। মোদীর উদ্যোগেসূচিত একগুচ্ছ সংস্কার কর্মসূচির দৌলতে দেশে সহজে ব্যবসা করার সুযোগ বেড়েছেউল্লেখযোগ্য। ইদানীং বিশ্বের বড় বড় সব সংস্হা লগ্নীর জন্য ভারতকে বেছে নিচ্ছে।স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে, সম্ভবত এই প্রথম তারা ভারতে বিপুল লগ্নির অঙ্গীকার করছে,এ সত্যিই এক বিরল ঘটনা !
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিমুদ্রায়ন সিদ্ধান্ত ভারতীয়অর্থনীতিকে সংগঠিত করতে এক মজবুত ভিত্তি গড়েছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের উপর অতিরিক্তনির্ভরতার দরুন বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ভারতীয় অর্থনীতিকে। কর্মসংস্হানের এক বড়উ ৎস হলেও, অসংগঠিত ক্ষেত্র করফাঁকি দিয়ে ও শ্রম আইন ভেঙে অর্থনীতিক প্রচুর ক্ষতি করে।বিমুদ্রায়নের মতই, আরেক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত পণ্য ও পরিষেবা কর আইন চালুর ফলেদেশের অর্থনীতিতে আসবে এক নতুন জোয়ার। এর দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে লগ্নিও বিকাশে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের মতে, “ পরিকাঠামো,শিক্ষা ও স্বাস্হ্যে লগ্নির সহায়তা ও রাজস্ব ভিত্তি বাড়াতে এই সংস্কার প্রয়োজনএবং উদ্দিষ্ট ভরতুকি তুলে দেওয়া দরকার। ”
আর্থিকও অন্যান্য (উপকার এবং পরিষেবা) উদ্দিষ্ট যোজনা আইন ২০১৬, ভরতুকির যুক্তিসম্মতপুনর্গঠন, দেউলিয়া বিধি ২০১৬ প্রণয়ন এবং নতুন কর্পোরেট দেউলিয়া কাঠামোর জন্য জাতীয়কোম্পানী আইন ট্রাইবুনাল ও জাতীয় কোম্পানী আইন আপিল ট্রাইবুনাল চালু করার মত কিছুপদক্ষেপ ভারতীয় অর্থনীতিকে সামলানোর আরও ক্ষমতা যোগাবে।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, ২০১৭-১৮-য় ভারতের বিকাশ হার হবে ৭.৭শতাংশ। এ থেকেই ভারতীয় অর্থনীতির ভিত মজবুত থাকার ও তার নীতি “ বিঘ্নতার ” ঝটকা সামনে নেওয়ার ক্ষমতা আরও একবার জোরালভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। শিল্প অর্থা ৎ কলকারখানা ক্ষেত্রের মুশকিল আসানের দিকে কেন্দ্র নজর দিলে, ভারত আরও বেশি বিকাশহার অর্জনের ক্ষমতা ধরে। ভারতে বাজারের দক্ষতা বাড়াতে, আন্তর্জাতিক মুদ্রাভান্ডারও বহুদিনের কাঠামোগত ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার প্রয়োজনের দিকে গুরুত্বদিয়েছে। ২০১৫-১৬ ভারতীয় অর্থনীতির বিকাশ হার ছিল ৭.৬ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতে,২০১৬-১৭-য় ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উ ৎ পাদন বাড়তে পারে ৭.৭ শতাংশ। সৌজন্যে কৃষিতে ফের উ ৎ পাদনবৃদ্ধির “ আশা ” ,সরকারি কর্মীদের মাইনে বাড়ায় ভোগ বৃদ্ধি, রপ্তানি বাড়া এবংমাঝারি মেয়াদে বেসরকারি লগ্নি ফিরে আসা। সম্প্রতি ভারতের বার্ষিক ৭ শতাংশের বেশিহার জি-২০ দেশ গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (OECD) এরসাম্প্রতিকতম ভারতের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৭ বলছে, কাঠামোগত সংস্কারের গতিবৃদ্ধিএবং বিধি-ভিত্তিক সমষ্টিগত অর্থনৈতিক (ম্যাক্রোইকনমিক) নীতি কাঠামোর দিকে অগ্রগতিদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রসারে অবদান রাখছে। বহু ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী লগ্নিরজন্য রীতিনীতি উদার করার সুবাদে বাড়বে রুজি-রোজগারের সুযোগ। নঞর্থক ছোট তালিকাটিছাড়া, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিশ্চিত করেছেন যে সমস্ত ক্ষেত্র প্রত্যক্ষবিদেশী লগ্নি পাবে অটোমেটিক অ্যাপ্রুভাল রুটের মাধ্যমে। এক হিসেব মত, ২০১৬-১৭-রএপ্রিল-ডিসেম্বর প্রত্যক্ষ বিদেশী লগ্নি গত বছরের ঐ সময়ের ২,৭২২ কোটি মার্কিন ডলারথেকে বেড়ে হয়েছে ৩,১১৮ মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬-তে চলতি খাতে ঘাটতিযথাক্রমে মাত্র ১.৩ এবং ১.১ শতাংশ।
অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকের দিক থেকেও, খুশি হওয়ার আরও ঢের জিনিসআছে। ২০১৬-১৭-য় ভারতের মোট সরকারি কোষাগার (অনেকে বলেন রাজকোষ) ঘাটতি বেঁধে রাখাগেছিল ৩.৫ শতাংশ। সরকার ২০১৭-১৮-তে এই ঘাটতি ৩.২ শতাংশে নামানোর অঙ্গীকার করেছে।তার পরের বছর এটা আরও কমে দাঁড়াবে ৩ শতাংশে। অহেতুক ব্যয় কাটছাঁট ও কর বাবদ আয়বাড়ানোর উপর নিয়ত জোর দেওয়ার মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকাররাজস্ব ক্ষেত্রকে জোরদার করতে বদ্ধ পরিকর। অর্থনৈতিক অঙ্গনে ভারত পেতে চলেছে আরওঅনেক সাফল্য, এগিয়ে যাচ্ছে সেরা অর্থনীতির তকমা অর্জনের লক্ষ্যে।
· লেখক হলেন প্রবীণ সাংবাদিক,বর্তমানে চন্ডীগড়ের ডেইলি পোস্ট পত্রিকায় কর্মরত।
নিবন্ধেপ্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব
PG/SM /NS/