independenceday-2016

Press Information Bureau

Government of India

Special Service and Features

টেলিভিশন বিপ্লবের অভিযাত্রা

Posted On :06, August 2017 18:09 IST

· সঞ্জয় কাচোট

১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) বিশ্বে প্রথম টেলিভিশনসম্প্রচার শুরু করার দু’দশকেরও কিছু বেশি সময়ের পর ১৯৫৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরভারতের রাজধানী দিল্লিতে প্রথম টেলিভিশনের সম্প্রচার শুরু হয়েছিল। ইউনেস্কোরসহযোগিতায় এই কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য, যান চলাচল, পথ চলারনিয়ম-কানুন, নাগরিকদের কর্তব্য ও অধিকারের মতো বিষয়ে সপ্তাহে দু’দিন এক ঘন্টা করেঅনুষ্ঠানের সম্প্রচার করা হ’ত। ১৯৬১ সালে স্কুল শিক্ষা, টেলিভিশন সম্প্রচারকে এরসঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে সম্প্রচারের পরিধি বাড়ানো হয়। ১৯৭২ সালে ভারতে টেলিভিশনেরপ্রথম বড় আকারের সম্প্রসারণ করা হয়। এই সময় বোম্বাইতে দ্বিতীয় টেলিভিশন কেন্দ্রটিখোলা হয়, এরপর শ্রীনগর এবং অমৃতসরে ১৯৭৩ সালে এবং কলকাতা, মাদ্রাজ এবং লক্ষ্ণৌ’তে১৯৭৫ সালে টেলিভিশন কেন্দ্র খোলা হয়।

প্রথম ১৭ বছর ভারতে টেলিভিশন সম্প্রচারের প্রসার হয়। খানিকটা থেমে থেমে এবংএই সময় সাদাকালো ছবি টেলিভিশনে সম্প্রচার হ’ত। ১৯৭৬ সাল নাগাদ ভারতে ৮টি টেলিভিশনকেন্দ্র ৭৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করত, আর তা৪.৫ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যেত। অল ইন্ডিয়া রেডিও বা আকাশবাণীর অঙ্গ হিসাবে এতবড় টেলিভিশন ব্যবস্থা পরিচালনার অসুবিধার কারণে সরকার তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকেরঅধীনে জাতীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্ক হিসাবে দূরদর্শনকে পৃথক বিভাগ হিসাবে গড়ে তোলে।

১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ফলে ভারতেটেলিভিশনের দ্রুতগতিতে বৃদ্ধির সূচনা হয়। এগুলি হ’ল – ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাস থেকে১৯৭৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত পরিচালিত উপগ্রহের মাধ্যমে শিক্ষামূলক টেলিভিশনসম্প্রচার বা ‘সাইট’ প্রকল্প। এতে দেশের ছ’টি রাজ্যে গ্রামাঞ্চলে একটি উপগ্রহব্যবহার করে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতে থাকে। এত মূল লক্ষ্য ছিল,টেলিভিশনকে উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা, যদিও সম্প্রচারের মধ্যে কিছু বিনোদনমূলকঅনুষ্ঠানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর ফলে, টেলিভিশন সাধারণ মানুষের ‘কাছাকাছি’আসে। এরপর, ১৯৮২ সালে দেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ ‘ইনস্যাট-১ এ’ কাজ করতে শুরুকরলে দূরদর্শনের সমস্ত আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলির মধ্যে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।সেই প্রথম দূরদর্শন দিল্লি থেকে অন্য সমস্ত দূরদর্শন কেন্দ্রের জন্য জাতীয়অনুষ্ঠান শুরু করে। ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসে দেশে এশিয়ান গেম্‌স-এর আয়োজন করাহয়েছিল এবং এই গেম্‌স-এর সম্প্রচারের সময় থেকেই রঙিন ছবির সম্প্রচার শুরু করে।

এরপর ৮০-র দশক ছিল দূরদর্শনের বিখ্যাত টেলিভিশন সিরিয়াল ‘হামলোগ’ (১৯৮৪),‘বুনিয়াদ’ (১৯৮৬-৮৭) এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ ‘রামায়ণ’ (১৯৮৭-৮৮) এবং মহাভারত(১৯৮৮-৮৯)-এর মতো পৌরাণিক নাটক দেখতে দূরদর্শনের সামনে ভিড় করত। বর্তমানে ভারতীয়জনসংখ্যার ৯০ শতাংশেরও বেশি ভূপৃষ্ঠে স্থাপিত ১ হাজার ৪০০-র কাছাকাছি ট্রান্সমিটারনেটওয়ার্কের মাধ্যমে দূরদর্শনের অনুষ্ঠান দেখতে পান। তৃতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি৯০-এর দশকের প্রথম দিকে আমাদের দেশে টেলিভিশনের রমরমাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল, তা হলউপগ্রহ টেলিভিশনের মাধ্যমে সিএনএন-এর মতো বিদেশি অনুষ্ঠানের সম্প্রচার। এরপরেইএসেছিল স্টার টিভি এবং তার আরও কিছু পরে জি-টিভি এবং সান-টিভির মতো আমাদের দেশেরচ্যানেলগুলি ভারতের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। এরপর সরকার পর্যায়ক্রমে টেলিভিশন সম্প্রচারসংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করলে ভারতে টেলিভিশনের সম্প্রচার বাড়ে। ১৯৯০-এর দশকেরমাঝামাঝি সময় থেকে কেবল টেলিভিশন সম্প্রচার পারিবারিক বিনোদনের ক্ষেত্রে বিপ্লবএনে দেয়।

২০১৫-১৬ বর্ষের ‘ট্রাই’-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে,চিনের পরই ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিভিশনের বাজার। ২০১৬-র মার্চের হিসাবঅনুযায়ী দেশের ২৮ কোটি ৪১ লক্ষ পরিবারের মধ্যে ১৮ কোটি ১১ লক্ষ পরিবারের টেলিভিশনসেট রয়েছে এবং এগুলির সঙ্গে দূরদর্শনের ভূ-পৃষ্ঠ থেকে পরিচালিত টেলিভিশন নেটওয়ার্কছাড়াও কেবল টিভি, ডিটিএইচ পরিষেবা এবং আইপি টিভি পরিষেবার সংযোগ রয়েছে। মাসিকঅর্থের বিনিময়ে ১০ কোটি ২১ লক্ষ কেবল টিভি গ্রাহক, ৮ কোটি ৮০ লক্ষ ৬৪ হাজার ডিটিএইচগ্রাহক (৫ কোটি ৮০ লক্ষ ৫৩ হাজার সক্রিয় গ্রাহক সহ) এবং প্রায় ৫ লক্ষ আইপি টিভিগ্রাহক রয়েছেন। দূরদর্শনের ভূপৃষ্ঠের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সারা দেশের বিরাট সংখ্যকট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ৯২.৬২ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছ যায়।

বর্তমানে দেশে অর্থের বিনিময়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে এই ধরনের ৪৮টি সংস্থারঅধীনে আনুমানিক ৬০ হাজার কেবল অপারেটর, ৬ হাজার মাল্টি সিস্টেম অপারেটর এবং ৬টিমাসিক চাঁদা-ভিত্তিক ডিটিএইচ অপারেটর রয়েছে। এছাড়াও, দেশের জনসম্প্রচার পরিষেবাদূরদর্শনের নিঃশুল্ক ডিটিএইচ পরিষেবাও রয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষের শেষে তথ্যসম্প্রচার মন্ত্রকে ৮৬৯টি টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে ২০৫টি স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশনপে টিভি চ্যানেল, (এর মধ্যে ৫টি বিভাগের মুক্ত পে চ্যানেল) এবং ৫৮টি হাই ডেফিনিশন(এইচডি) পে টিভি চ্যানেল রয়েছে।

ভারতের টেলিভিশন শিল্প ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে ৪,৭৫,০০৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ৫,৪২,০০৩ কোটি টাকা হয়েছে। পরিমানগত দিক থেকে বৃদ্ধির হার প্রায়১৪.১০ শতাংশ। টেলিভিশন শিল্পের রাজস্বের মোট আয়ের একটা বড় অংশই আসে গ্রাহকদের কাছথেকে সংগৃহীত মাসিক চাঁদা থেকে। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে গ্রাহক চাঁদা থেকে সংগৃহী্তরাজস্ব ছিল ৩,২০,০০৩ কোটি টাকা, আর ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে বিজ্ঞাপন বাবদ রাজস্ব ছিল২,৫৫,০০৩ কোটি টাকা, যা ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে বেড়ে হয় ২,৮১,০০৩ কোটি টাকা। শেষ দশকেভারতে কেবল এবং স্যাটেলাইট টিভি বাজারের পরিচালনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনলক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য, তা হলভারতের কেবল টিভি ক্ষেত্রে ডিজিটাল সম্প্রচার।

ভারতে টেলিভিশনের ভবিষ্যৎ

গ্রাহক সংখ্যার নিরিখে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয়অঞ্চলে; ভারত হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রাহক চাঁদা-ভিত্তিক টেলিভিশনের বাজার,টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের হিসাবে ২০২০ সালের মধ্যে যেসব দেশগুলিতে দুই সংখ্যার বৃদ্ধিহার হবে। ভারত তার মধ্যে অন্যতম। যদিও বৃদ্ধি হার সম্পৃক্তির পর্যায়ে পৌঁছালেবার্ষিক গড় চাঁদার হার কিছুটা কমবে। তবে, ২০২০ সাল পর্যন্ত কেবল টেলিভিশনে উপগ্রহ-ভিত্তিকটেলিভিশনকে ছাপিয়ে যাবে। এছাড়া, ডিজিটাইজেশনের ফলে টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যাবিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে ভারতে ৬১ শতাংশের মতোমানুষের কাছে টেলিভিশন পৌঁছে গেছে। যার অর্থ এখনও এর সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনারয়েছে।

ভারতের গণ্যমাধ্যম এবং বিনোদন শিল্প বার্ষিক১০.৫ শতাংশ হারে বেড়ে বর্তমানের ২৭৩ কোটি ডলার থেকে ৪৫১ কোটি ডলারে পৌঁছে যাবে বলেবিখ্যাত প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স সংস্থার ‘গ্লোবাল এন্টারটেনমেন্ট অ্যান্ডমিডিয়া আউটলুক ২০১৭-২১’ নাম রিপোর্ট থেকে জানা গেছে।

ভারতে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বৃদ্ধির বার্ষিক ১৮.৬শতাংশ, যাকে দ্রুততম বলে অনুমান করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ২০১৭ থেকে ২০২১-এর মধ্যেটেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের হার বার্ষিক ১১.১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।ঐ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধির হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেটেলিভিশন বাজারেও সম্প্রসারণের বিপুল সুযোগ দেখা দেবে।

· লেখক – গুজরাটেরআনন্দের ইন্সটিটিউট অফ ল্যাঙ্গোয়েজ স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সোস্যাল সায়েন্সের(আইএলএএসএস) সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যম বিভাগে শিক্ষকতা করেন।

· এই নিবন্ধে প্রকাশিতবক্তব্য সম্পূর্ণভাবে লেখকের নিজস্ব, এতে পিআইবি’র মত প্রতিফলিত হয় না।

PG / PB/ SB