Responsive image

Press Information Bureau

Government of India

Special Service and Features

রাষ্ট্রীয় একতা দিবস (৩১শে অক্টোবর ) সর্দার প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে _ বিশেষ নিবন্ধ _

Posted On :30, October 2017 17:34 IST

  সর্দার প্যাটেল : ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন যে মহানব্যক্তিত্ব   

  

* আদিত্য তিওয়ারি   

ব্রিটিশ ভারতের একজন সিভিল সার্ভিস আধিকারিক স্যার জনস্ট্র্র্যাচি তাঁর অধীনে প্রশিক্ষণরত অন্য সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের সামনে প্রায়ইবলতেন,  ‘ ভারত সম্পর্কে সবচেয়েপ্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে,ভারত কোনো একক বিষয় নয় বা কখনো ছিল না|ঐতিহাসিকডেভিড লাডেন তাঁর  ‘ কনটেস্টিংদ্য নেশন :রিলিজিয়ন,কমিউনিটি, অ্যান্ড দ্য পলিটিক্স অব ডেমোক্র্যাসি ইন ইন্ডিয়া ’  বইতে লিখেছেন, যেঅঞ্চলটার ছবি আমরা ভারতীয় সভ্যতার বর্ণনা প্রসঙ্গে আঁকি তা মূলতঃ ব্রিটিশ রাজেরচিহ্নিত রাজনৈতিক সীমারেখা|আজকে ভারতের এই যে ভৌগোলিক,জনসংখ্যাগত বা সংস্কৃতিগতচরিত্র ১৯৪৭ সালের আগে তা এমন ছিলো না| ’  উইনস্টন চার্চিলের মত ব্যক্তিত্ব আশংকা করেছিলেন স্বাধীনতাপরবর্তী ভারত আবার ছত্রভঙ্গ হয়ে সেই মধ্যযুগের অবস্থায় ফিরে যাবে|   

স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর ভারত বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হয়|সেই সময়ের দেশে পরিচালক নেতাদের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, বহুকাল ধরে  এখানকার মানুষেরবিক্ষিপ্ত ভৌগোলিক পরিসরে থাকার প্রবণতা কাটিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট সীমারেখাটানা|ডায়ানা এল এক তাঁর  ‘ ইন্ডিয়া- এ সেক্রেড জিওগ্রাফি ’  বইতে লিখেছেন, ভারতের মাটি বহু শতাব্দীবছর ধরে তীর্থযাত্রীদের পথচলা অনুসরণ করে পরিচিতি পেয়েছে|পন্ডিত জওহরলাল নেহরুলিখেছেন, ভারতের একতার চেতনা আসলে এক আবেগময় অভিজ্ঞতা|  ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে তিনি ভারতেরচাষীদের মধ্যে একতার ভাবনা বপনের প্রয়াস সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করেছেন|তিনি লিখেছেন,  ‘ আমি তাঁদেরসার্বিক ভারত-ভাবনায় জারিত করতে চেয়েছিলাম...কিন্তু বিষয়টা ততো সহজ ছিল না|তবে তাএত কঠিনও ছিল না, আমি যতটা ভেবেছিলাম|আমাদের প্রাচীন মহাকাব্য,আখ্যান ও কিংবদন্তিসম্পর্কে তাঁরা এতটাই ওয়াকিবহাল ছিলেন যে, তাঁদের মধ্যে খুব সহজেই দেশাত্মবোধজাগানো সম্ভব হয়েছিল|  

আঞ্চলিক ওআবেগগতভাবে দেশ পুনর্গঠনের কাজটা সে সময়ে নিঃসন্দেহে ব্যাপক বিষয় ছিল| গোটা দেশ একউথালপাতালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল| দেশটাকে খন্ড-বিখন্ড করার চক্রান্তকারীরা চারদিকেপ্রবলভাবে তখন সক্রিয়| দেশভাগের সময় মহাত্মা গান্ধীর মত নেতাদের কাছে বিশাল বড়প্রশ্ন ছিল, ব্রিটিশরা দেশ ছেড়ে গেলে এই ভূখন্ডে কি দু ’ টো দেশ হবে, না ৫৬৫টা ছোট ছোট দেশ? এরকমইএকটা সময়ে ভারত পুনর্গঠনের দায়িত্ব বর্তায় লৌহ পুরুষ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলেরবলিষ্ঠ হাতে|  

সর্দার প্যাটেল নিজের অসুস্থ এবং বয়সে ভারাক্রান্ত শরীরসত্ত্বেও একতাবদ্ধ ভারত গড়ার বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে আসেননি|ভি.পি. মেনন,যিনিএই হিমালয় প্রমান কাজ সম্পন্ন করায় তাঁকে যোগ্য সহায়তা প্রদান করেছিলেন,নিজের  ‘ দ্য স্টোরি অব দ্য ইন্টিগ্রেশন অব দ্য ইন্ডিয়ান স্টেটস ’ -এ লিখেছিলেন,  ‘ ভারত বর্তমানেএকটি ভৌগোলিক পরিসরগত একক বটে, কিন্তু এর গোটা ইতিহাসে কখনই তা একতাবদ্ধ চেহারায়আসতে পারেনি|...আজ দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কৈলাস থেকে কন্যাকুমারী,কাথিয়াওয়াড় থেকে কামরূপ(আসামের পূর্ব নাম)একটিমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীনেএসে গেছে|ভারতের এই চেহারাটা তৈরী করতে গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক ভূমিকা পালনকরেছিলেন সর্দার প্যাটেল|   

৩রা জুনেরপরিকল্পনামাফিক কংগ্রেস ভারত ও পাকিস্তান এই দুই অঞ্চলে দেশটির বিভাজনের ব্যাপারেসম্মতি প্রদান করেছিল|সেই সময়ে ভারত মানে ব্রিটিশ আধিপত্যাধীন বহুধাবিভক্ত অঞ্চলএবং ৫৬৫টি স্বাধীন করদ রাজ্য|এই করদ রাজ্যগুলিকেই বেছে নিতে হচ্ছিল, সেগুলি ভারতেনা পাকিস্তানে যাবে, অথবা তথাকথিত স্বাধীন থেকে যাবে|কয়েকটা রাজ্য, যেমন,ত্রিবাঙ্কুর, হায়দ্রাবাদ, জুনাগড়, ভোপাল এবং কাশ্মীরের ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায়সম্মতি ছিল না| আবার গোয়ালিয়র, বিকানীর, বরোদা,পাতিয়ালাসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যস্বতঃস্ফুর্তভাবে ভারতের সঙ্গে যোগ দিতে তৈরী ছিল|    

সর্দার প্যাটেল জানতেন,  ‘ সারাদেশে একই সুপ্রশাসনিক সেবা চালু করা ছাড়া একতাবদ্ধ ভারতগঠন সম্ভব নয়| ’  এজন্যই তিনি ভারতপুনর্গঠনের আগেই ভারতীয় গণপরিষেবার ইস্পাতকঠিন পরিকাঠামো গঠনে মনযোগদিয়েছিলেন|সর্দার প্যাটেল স্বাধীন করদ রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার জন্যনিরলস প্রয়াস চালিয়েছিলেন|এজন্য তিনি যেখানে যেমন প্রয়োজন সাম, দান, দন্ড,ভেদ-এরচার নীতিই অবলম্বন করেছিলেন|তিনি সহযোগী ভি.পি. মেননকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্নরাজ্যের শাসকদের অনুরোধ ও দাবি অনুযায়ী ‘ অপরিবর্তনীয়তার সমঝোতা এবং অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থাপনা ’  তৈরী করেছিলেন|  

সর্দার প্যাটেল ও ভি.পি. মেননের দৃষ্টিভঙ্গি পন্ডিত নেহরুরতুলনায় অনেক বেশি স্থিতিস্থাপক ছিল|১৯৪৭-এর মে মাসে পন্ডিত নেহরু ঘোষণা করেছিলেন,যে সমস্ত স্বাধীন করদ রাজ্য ভারতে যোগদানের ক্ষেত্রে আপত্তি জানাবে তাদের সংবিধানপরিষদ শত্রুভাবাপন্ন শক্তি হিসেবে বিবেচনা করবে|১৯৪৭-এর ৫ই জুলাই সর্দার প্যাটেলযখন আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের নীতি সংক্রান্ত বিবৃতি দেন তাতে এরকম কোনো হুমকিরউল্লেখ ছিল না|বরং সেখানে কংগ্রেসের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির প্রতিস্পষ্ট আশ্বাস ছিল| সেই সঙ্গে তাদের প্রতি একসঙ্গে বসে বন্ধুর মত আইন তৈরী করারপাশাপাশি সহযোগীর মত চুক্তির বয়ান তৈরী করা ব্যাপারে আমন্ত্রণও জানানো হয়|এভাবেইতিনি ব্রিটিশ ভারতের অঞ্চলগুলির অঙ্গে রাজন্যশাসিত করদ রাজ্যগুলিকে এক সুতোয় গেঁথেক্ষতবিক্ষত ভারত তৈরির সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করেছিলেন|   

সর্দার প্যাটেলএটা জানতেন ভারতবর্ষের শুধুমাত্র রাজনৈতিক পুনর্গঠনই যথেষ্ট নয়|তিনি বিশ্বাসকরতেন, ভারতের এই ক্ষতবিক্ষত সভ্যতাকে বন্ধুত্ব ও দয়াপরায়নতার পথেই পূর্বেকারদাসত্ব ও গঞ্জনার পরিস্থিতি সারাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে| তখন ভারতবাসীর মধ্যেকারবিচিত্র সংস্কৃতি সত্ত্বেও একতার বন্ধনকে পুনরুজ্জীবিত করাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরিছিল|১৯৪৭-এর ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী সর্দার প্যাটেল সোমনাথ মন্দিরপুনর্নির্মাণের ঘোষণা করেন|সোমনাথ মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল|আগেও বেশ কয়েকবারমন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করতে হয়|ধ্বংসস্তুপ থেকে আরও একবার এই মন্দিরটিকে গড়ে তোলারআখ্যান সে সময়ে ভারতের সার্বিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার পক্ষে খুবই প্রতীকি বিষয় ছিল|দেশের প্রথম বা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ মন্দির চত্বরের উদ্বোধনীঅনুষ্ঠানে বলেছিলেন,  ‘ আমারদৃষ্টিভঙ্গিতে সোমনাথ মন্দিরের পুনর্নির্মাণ তখনই সম্পন্ন হবে যখন সেখানেশুধুমাত্র একটা মন্দিরই গড়ে উঠবে না, বরং ভারতের সেই সমৃদ্ধ অতীতেরও এক ভিত্তিরচিত হবে সোমনাথ মন্দির যার প্রতীক ছিল| ’  তিনি আরও বলেছিলেন,  ‘ এই মন্দিরের পুনর্নির্মাণই প্রমানকরেছে,ধ্বংসের শক্তির চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাবান পুনর্নির্মাণের প্রক্রিয়া| ’ 

সর্দার প্যাটেল ভারতীয় সভ্যতার পুনর্নির্মাণে একজনসত্যিকারের নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন|আর এমন একটা সময়ে যখন ভারতের বর্তমানপ্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি  ‘ নতুন ভারত ’  গঠনের ডাক দিয়েছেন, সেখানে প্যাটেলের রাজন্য শাসিত করদরাজ্যগুলির শাসকদের প্রতি লেখা চিঠির শব্দমালা আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়েউঠেছে|তিনি লিখেছিলেন, আমরা ভারত ইতিহাসের একটা স্মরণীয় মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি|আমরাসবাই মিলে দেশকে নতুন মহানতার উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি|অন্যদিকে একতার অভাবে আমরাঅপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখেও পড়তে পারি|আমি আশা করি, ভারতীয় রাজ্যগুলি এটাপুরোপুরি উপলব্ধি করবে যে,আমরা যদি সাধারণ স্বার্থে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা নাবাড়াই,তাহলে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ ছোট হোক,বড় হোক, আমাদের সবাইকেই সার্বিকধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে|আমাদের সবার জন্যই গুরুদায়িত্ববর্তায় যাতে আমরা পারস্পরিকলাভজনক সম্পর্কের একটা গৌরবময় ঐতিহ্য গড়ে তুলি,যার মাধ্যমে এই পবিত্র ভূখন্ড গোটাবিশ্বে নিজের উপযুক্ত মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এবং একে শান্তি ওসমৃদ্ধির আদর্শ স্থানে পরিবর্তিত করতে পারি| ’   

  

*****  



* নিবন্ধকারবর্তমানে ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশনে সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে আছেন|  

এই নিবন্ধে প্রকাশিত অভিমত একান্তভাবে নিবন্ধকারেরব্যক্তিগত|   

   

SK/SB